স্মার্ট বাংলাদেশ: ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান মনস্কতা এবং বিজ্ঞান শিক্ষা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিনবদলের সনদ’ এ ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। রূপকল্প ২০২১ এর মূল উপজীব্য ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য অর্জনে প্রণয়ন করা হয়েছিল প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১। এই পরিকল্পনা ভিত্তি স্থাপন করেছে স্মার্ট বাংলাদেশ অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২৫, ২০৩১ ও ২০৪১-এর সময়রেখার মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ দেশ ও সমাজের উন্নতি নিশ্চিত করবে, গড়ে তুলবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ঘোষণা করেন সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়। স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিগত এবং উদ্ভাবনী। স্মার্ট বাংলাদেশ এর রয়েছে চারটি স্তম্ভ - স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজব্যবস্থা।

স্মার্ট নাগরিক

শতভাগ শিক্ষিত নাগরিকেরা নতুন নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে নিজেদের এবং সমাজের সকলের জীবন ও জীবিকার মান বদলে দেবে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট বা কম্পিউটারের মাধ্যমে তারা সমাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে; সরকারি ও বেসরকারি খাত প্রদত্ত পণ্য ও সেবা গ্রহণ করবে; দেশ বিদেশের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন ঋদ্ধ করে তুলবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।

স্মার্ট অর্থনীতি

স্মার্ট অর্থনীতি ধর্ম, বর্ণ, জাতি, নারী-পুরুষ, শিক্ষা অথবা ভৌগোলিক দূরত্ব নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে। রোবটিক্সের ব্যবহার হবে কৃষি, শিল্প, সেবা সকল খাতে; কমিয়ে ফেলা যাবে কায়িক শ্রম; সম্পদের হবে সুষ্ঠু ব্যবহার; কমবে অপচয়; বাড়বে উৎপাদনশীলতা; খরচ কমবে উৎপাদনের; উৎপাদন হয়ে উঠবে প্রতিযোগিতামূলক; প্রসারিত হবে আভ্যন্তরীণ ও রফতানি বাজার। তথ্য প্রযুক্তি সহযোগে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নেয়া যাবে দ্রুত ও তথ্য নির্ভর সিদ্ধান্ত; সহজে করা যাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা; ব্যবস্থাপনা হয়ে উঠবে দক্ষ।

স্মার্ট সরকার

প্রযুক্তির ব্যবহার সরকার পরিচালনা ব্যবস্থাকে দক্ষ, কার্যকর এবং সাশ্রয়ী করে তুলবে, সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করবে। স্মার্ট সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তই হবে জ্ঞাননির্ভর। আইওটি, মেশিন লার্নিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাবলী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে এবং স্মার্ট নাগরিকদের স্মার্ট প্রতিনিধির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার পরিচালনার সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করবে। সরকার তথা রাষ্ট্র হয়ে উঠবে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক।

স্মার্ট সমাজ

স্মার্ট বাংলাদেশের প্রযুক্তির সহযোগিতায় দূর করা যাবে সব রকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট সমাজে নাগরিকেরা জ্ঞান চর্চা ও প্রয়োগের সুযোগ পাবেন অনেক বেশি। সঠিক তথ্য প্রবাহের ফলে কমে যাবে ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে অনৈতিক সুযোগ। প্রযুক্তি ব্যবহার সংস্কৃতি চর্চা, বিনোদন ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনের সময় ও সুযোগ বৃদ্ধি করবে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। শিল্প উৎপাদনের নতুন ধারায় তুলনীয় সক্ষমতা ছাড়া বিশ্বব্যাপ্ত ভ্যালু চেইনে সম্পৃক্ত থাকা সম্ভব নয়। দুরদর্শী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানান; যার সাফল্যের ভিত্তিতে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণ অপ্রতিরোধ্য গতিতে অগ্রসর হচ্ছে।